চিরায়ত
হে অরণ্য কথা কও
অরণ্য আর বিভূতিভূষণ সমার্থক অনেকের কাছেই আর পাঠক মাত্রেই জানেন সে কথা অমূলক নয়। তাঁর নামকরা অরণ্য সংক্রান্ত উপন্যাসগুলো পাঠক সমাজে চির সমাদৃত। এই উপন্যাসগুলোর পেছনে যে ছিল বিভূতিভূষণের নিজস্ব অভিজ্ঞতা তাও আমরা অনুমান করতে পারি, কিন্তু পাঠক হিসেবে যদি এই উপন্যাসগুলোর অঙ্কুরোদগমের খবর জানতে চান তাহলে পড়তে হবে ডাইরিতে লেখা তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। এগুলি পড়াও পাঠকের কাছে একটা আবিষ্কার , কারণ তা আপনাকে ক্ষনে ক্ষনে মনে করিয়ে দেবে আরণ্যক বা চাঁদের পাহাড়ের কোনো অংশ। আপনি বুঝতে পারবেন উপন্যাসের পটভূমিকা। এই উদ্দেশ্যেই প্রথমে উপন্যাস গুলি দিয়ে পরে ডাইরির অংশবিশেষ সংকলিত করা হলো।
অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র
কে না এডভেঞ্চার ভালোবাসে? আর তা যদি হয় এই চিরপরিচিত সমতল বাংলার ভূমি থেকে বহু বহু দূরে গহীন, বন্য, সভ্যতার আলোকহীন আফ্রিকায়, mountain of moon এ। বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন এরকম কিছু এডভেঞ্চার যার সবকটিতেই আছে পাড়াগেঁয়ে বাঙালি। অত্যন্ত স্বাদু এই উপন্যাস গুলি প্রিয় সব বয়সেরই।
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণকথামৃত (সম্পূর্ণ)
শ্রীম- মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যক্তিত্বে আকর্ষিত হয়ে মহেন্দ্রনাথ তার কথোপকথন ও কার্যকলাপের স্টেনোগ্রাফিক রেকর্ড রাখতে শুরু করেন নিজের ডায়েরিতে। এই রেকর্ডটিই পরবর্তীকালে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত নামক বইয়ের আকার নেয়।
রচনাপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন, "বাড়ি ফেরার পর স্মৃতি থেকে সব কিছু লিখে রাখতাম। মাঝে মাঝে সারা রাতও জেগে থাকতে হত...মাঝে মাঝে টানা সাত দিন বসে থেকে লিখতে হত। গানগুলিকে স্মরণে আনতে হত, কোন ক্রমে সেগুলি গাওয়া হয়েছিল, সেগুলিও মনে করতে হত, সমাধি ও অন্যান্য সব ঘটনার কথা মনে করতে হত।" কথামৃতের প্রতিটি পরিচ্ছেদে মহেন্দ্রনাথ তথ্যের পাশাপাশি সময় ও স্থানের উল্লেখ করেছেন। "কথামৃত" শব্দটি বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থ ভাগবত পুরাণ-এর ১০।৩১।৯ সংখ্যক শ্লোক থেকে গৃহীত।
ভারতের আখ্যান - মহাভারতে বর্ণিত আখ্যান সমূহ
যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে , এই কথাটা কেন বলা হয় ? তার একটা কারণ মহাভারতে ছড়িয়ে থাকা আখ্যান সমূহ, বেশির ভাগ সময়ই এই সব আখ্যানের সরাসরি কোনো যোগ নেই মূল কাহিনীর সঙ্গে। কিন্তু এগুলো বলা হয়েছে উপদেশ দেবার ছলে। এর থেকেই বোঝা যায় প্রাচীন ভারতীয় মন ও মানসিকতা। কেমন ছিল তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা, কেমন ছিল তৎকালীন মরাল , নীতি দুর্নীতির মাপকাঠি। সেই জন্যেই এই গল্পগুলিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর মহাভারতে বর্ণিত এই সব আখ্যান সমূহের্ সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এগুলি কে নিয়েই আলাদা ভাবে এই বই।
পরশুরাম গল্প সমগ্র
পরশুরামের গল্পের জনপ্রিয়তার পিছনে বড় কারণ এদের কৌতুক, wit, humor আর satire, এই তিনধরণের কৌতুকের মধ্যে পরশুরাম বেছে নিয়েছিলেন satire কেই। আর তার ফল অমর সব চরিত্র , গন্ডেরিরাম বাটপারিয়া, কারিয়া পিরেত, জাবালি পত্নী হিন্দ্রলিনী। শ্যামানন্দ ব্রহ্মচারী, বিরিঞ্চিবাবা, হনুমান প্রেমিকা চিলিম্পা— আরও কত সব।
প্রখর বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জ্বল তাঁর হাস্যরসাত্মক গল্পগুলি জীবনের নানা অসঙ্গতিকে অবলম্বন করে রচিত। দীর্ঘকাল তাঁর এইসব রচনা বাঙালীকে নির্মল আনন্দ দিয়েছে। আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে।
সুকান্ত সমগ্র
সুকান্ত ভট্টাচার্য ! সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬/৭ বছর। পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তাঁর কবিতার মূল প্রেরণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন।
সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু। এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। আর সঙ্গে রয়েছে তাঁর রচিত সমস্ত কবিতা।
আরণ্যক
বাংলা কথাসাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৪-১৯৫০) ক্লাসিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে প্রধানতম হলো ‘আরণ্যক’।১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাগলপুরে থাকাকালে তিনি ‘আরণ্যক’ লেখার পরিকল্পনা করেন। ঐ সময় পাথুরিয়াঘাটা এস্টেটের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে ইসমাইলপুর এবং আজমাবাদের অরণ্য-পরিবেশে থাকার ফলে আজন্ম নিসর্গরূপকার বিভূতিভূষণ ব্যাপক পরিভ্রমণ ও নানা বিষয়ে পর্যবক্ষেণ করেন। চাকরির সুবাদে তিনি যা কিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তারই জীবন-ঘন বর্ণনা আমরা পাই আরণ্যক উপন্যাসে।
উপন্যাসের মূল প্রটাগনিস্ট সত্যচরণ নামে এক যুবকের পনেরো-ষোলো বছর পূর্বের স্মৃতিচারণে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী।
বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় কুশী নদীর অপর পারের আজমাবাদ, লবটুলিয়া, ইসমাইলপুর সংলগ্ন বিস্তৃত অরণ্যময় অঞ্চলটি হচ্ছে আরণ্যক উপন্যাসের মূল পটভূমি। বন্য-অশিক্ষিত-দরিদ্র-অসহায় মানুষের অদ্ভুত-অজ্ঞাত জীবনধারা আর প্রকৃতির ভিন্নতর এক মুগ্ধতার আবেশ তাঁর এই কাহিনীর ক্যানভাস।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা সমগ্র
স্বামী বিবেকানন্দ সম্পূর্ণ রচনাবলী (১-১০ খন্ড), এতে রয়েছে চিকাগো বক্তৃতা সমেত স্বামীজীর সমস্ত বক্তৃতা, তাঁর লেখা প্রবন্ধাবলী যেমন রাজযোগ, কর্মযোগ, পাতঞ্জল যোগ ইত্যাদি, তাঁর রচিত গান এবং কবিতা। তাঁর সম্পূর্ণ পত্রাবলী। তাঁর উপদেশাবলী ( স্বামী-শিষ্য সংবাদ) এবং বিদেশে অবস্থানকালে সেখানকার নানান সংবাদপত্রে বেরোনো কাটিংয়ের বঙ্গানুবাদ।
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ শিবনাথ শাস্ত্রী রচিত একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি ১৯ শতকের বাঙ্গালীর সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্রনীতির এক উৎকৃষ্ট নির্ভরযোগ্য দলিল রূপে পরিচিত। রামতনু লাহিড়ীর সঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রীর পরিচয় ২২শে আগস্ট ১৮৬৯ সালে ও তার পর থেকে তা দীর্ঘ ২৯ বছরের গাঢ় পরিচয় ঘনীভূত হয়েছিল। প্রথমে শাস্ত্রী মশাই শুধু মাত্র রামতনু লাহিড়ীর জীবনী লিখবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দেখেছিলেন ১৮১৩ সাল থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত রামতনু লাহিড়ীর জীবন ১৯ শতকের বাঙ্গালীর সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্রনীতির ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। তাই পরে ‘তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ যুক্ত করেন। স্বভাবতই রামতনু লাহিড়ীর জীবনীসূত্রে ১৯ শতকের যেসব মনীষী নবজাগরণের সাথে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তারাও এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছেন। জীবনীগ্রন্থ হিসাবে রচিত হলেও বইটির মূল্য যে এর ঐতিহাসিকতায় এ সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন।
কলিকাতা কল্পলতা
“কলিকাতা কল্পলতা” গ্রন্থটি সম্ভবত বাংলা ভাষায় কোলকাতার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। তত্কালীন কলকাতা কেমন ছিল, তার এক সুন্দর বর্ণনা এখানে পাওয়া যায়। কলকাতার নামকরণ কি ভাবে হল তার একটা ব্যাখ্যা এখানে পাওয়া যায়। এপ্রসঙ্গে “কলিকাতা কল্পলতা’ থেকে ছোট একটি উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে: এক রহস্যজনক জনশ্রুতি এই যে, ইংরাজেরা যখন প্রথমতঃ এইস্থানে বাণিজ্যালয় স্থাপনার্থ আগমন করিলেন তখন গঙ্গাতীরে দণ্ডায়মান কোন লোককে অঙ্গুলী প্রসারণ পূর্বক স্থানের নাম জিজ্ঞাসা করাতে সে ব্যক্তি সেইদিকে শায়িত এক ছিন্নবৃক্ষ দেখিয়া মনে করিল সাহেবরা কবে ঐ বৃক্ষছেদন হইয়াছে, তাহাই জিজ্ঞাসা করিতেছেন। অতএব সে উত্তরচ্ছলে কহিল— “কালকাটা”। সেই হইতে ইংরাজেরা ইহার নাম “ক্যালকাটা” রাখিলেন। জনশ্রুতি থেকে সাহিত্যিক উপাদান আর নথিপত্র, বহুবিধ উৎসের তথ্য বাছ-বিচার করে রঙ্গলাল কোলকাতার ইতিহাস রচনা করেন।
চার ইয়ারি কথা
ঘড়িতে রাত দশটা ! ঝড়বৃষ্টি আসবার আশু সম্ভাবনা ! কে সমস্ত আকাশটিকে একখানি একরঙা মেঘের ঘেরাটোপ পরিয়ে দিয়েছে, এবং সে রং কালোও নয়, ঘনও নয়; কেননা তার ভিতর থেকে আলো দেখা যাচ্ছে। ছাই-রঙের কাচের ঢাকনির ভিতর থেকে আলো দেখা যায়, সেইরকম আলো। আকাশ-জোড়া এমন মলিন, এমন মরা আলোতে বাইরে যা-কিছু আছে, সব কিরকম নিস্পন্দ, নিস্পন্দ, নিস্তব্ধ হয়ে গেছে; যা জীবন্ত তাও মৃতের মত দেখাচ্ছে; বিশ্বের হৃৎপিণ্ড যেন জড়পিণ্ড হয়ে গেছে, তার নিশ্বাসরোধ হয়ে গেছে, রক্ত-চলাচল বন্ধ হয়েছে; মনে হচ্ছে যেন সব শেষ হয়ে গেছে যেন আর এক পৃথিবীর আর এক আকাশ;-দিনের কি রাত্তিরের বলা শক্ত।
এ আলোর স্পর্শে পৃথিবী যেন অভিভূত, স্তম্ভিত, মূৰ্জিত হয়ে পড়েছিল। চারপাশে তাকিয়ে দেখি,গাছ-পালা, বাড়ী ঘর-দোর, সব যেন কোনও আসন্ন প্রলয়ের আশঙ্কায় মরার মত দাঁড়িয়ে আছে ! পৃথিবীর উপরে সে রাত্তিরে যেন শনির দৃষ্টি পড়েছিল।
আর এরকম পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছে চার ইয়ার। সেন, সীতেশ, সোমনাথ এবং আমি।
সেন বল্লেন—”যেরকম আকাশের গতিক দেখছি, তাতে বোধ হয়। এখানেই রাত কাটাতে হবে।”
কি ঘটলো সেই রাতে? চেনাজানা পরিধি ছাড়িয়ে চার ইয়ার কি অন্য কিছুর স্পর্শ পেলো ? পড়ুন প্রমথ চৌধুরীর অনবদ্য গ্রন্থ -চার ইয়ারি কথা।
তরুণের স্বপ্ন
বর্তমানে দেশের পারিপার্শ্বিক বাতাবরণ এবং দেশবাসীর চিন্তাধারার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু ‘তরুণের স্বপ্ন’-র যে “গোড়ার কথা” তার সত্যতা আরও তীব্রভাবে প্রতিভাত।স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে যে ঐকান্তিকতা, আগ্রহ ও সাধনার দরকার তা আজও আমাদের নাগালের বাইরে। দেশে শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়েছে, ব্যবসা হয়তো বেড়েছে কিন্তু নতুন কর্মস্রোতের অভাব প্রকট। সংখ্যা বৃদ্ধি হয়তো পরিসংখ্যানগত ভাবে বোঝাবে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ও কর্ম্মধারাকে সফল করার একমাত্র ভিত্তি—ব্যক্তিগত চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন এবং তা অর্জনে আমরা কতটা সফল, তাই হলো ‘তরুণের স্বপ্ন’র প্রথম ও শেষ প্রশ্ন। এবং এই ক্ষেত্রে যে আদর্শ মানুষ আমাদের রোল মডেল হতে পারেন, সেই মানুষের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে।দরকার এমন একজন এই চরিত্রবান পুরুষের যিনি তারন চিন্তা ভাবনা কর্মপদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তরুণ যুব সমাজকে সঠিক দিশা দেখাতে পারবেন।এটাই তরুণের স্বপ্ন হওয়া উচিত। তাই নেতাজীর ভাবনা দেশের মানুষকে জাগ্রত করে তুলুক, উদ্বুদ্ধ করুক।
নীলদর্পণ- Neel Darpan
নীলদর্পণ নাটকের মূখ্য উপজীব্য বিষয় হল বাঙালার কৃষক ও ভদ্রলোক শ্রেণীর প্রতি নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী। কিভাবে সম্পন্ন কৃষক গোলকমাধবের পরিবার নীলকরদের অত্যাচারে ধ্বংস হয়ে গেল এবং সাধুচরণের কন্যা ক্ষেত্রমণির মৃত্যু হল, তার এক মর্মস্পর্শী চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে এই নাটকে। এই নাটকের অত্যন্ত শক্তিশালী এক চরিত্র হল তোরাপ; যার তুলনা বাংলা সাহিত্যে খুব কমই আছে। এই নাটকের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আঞ্চলিক ভাষার সাবলীল প্রয়োগ। কর্মসূত্রে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় যে দক্ষতা দীনবন্ধু আয়ত্ত করেছিলেন, তারই এক প্রতিফলন দেখা যায় এই নাটকের চরিত্রচিত্রণে ও বাক্যবিন্যাসে।
(**This book has both Bengali and English version together)
পথের পাঁচালি ও অপরাজিত
‘পথের পাঁচালী' উপন্যাস নিশ্চিন্দিপুর গ্রামকে আশ্রয় করে প্রধানতঃ অপু ও দুর্গার শৈশব-কৈশোরের বয়স ঘেরা দেহ মনের রূপকথা। এই রূপকথাময় কল্পনার দেশের পরিচয় দেওয়া হয়েছে প্রধানতঃ অপুর দৃষ্টিকোণে। তাই “সে বেতসী কণ্টকিত তট, বিচিত্র পুলিন গোদাবরী, সে শ্যামল জন্মস্থান, নীল মেঘমেলায় ঘেরা সে অপূর্ব শৈলপ্রস্থ, রামায়ণে বর্ণিত কোনো দেশে ছিল না। বাল্মীকি বা ভবভূতিও তাহাদের সৃষ্টিকর্তা নহেন। কেবল অতীত দিনের কোনো পাখিডাকা গ্রাম্য সন্ধ্যায় এক মুগ্ধমতি গ্রাম্যবালকের অপরিণত শিশুকল্পনার দেশে তাহারা ছিল বাস্তব, একেবারে খাঁটি, অতি সুপরিচিত।” তবু শিশুর কল্পনাময় জগতের পাশে ‘বল্লালী বলাই’ অংশে স্থান পেয়েছে ইন্দিরা ঠাকরুণের কথা, যা লেখকের সমাজ সচেতন ঐতিহ্যচেতনাকে চিহ্নিত করে। 'পথের পাঁচালী'র পরবর্তী অংশ ‘অপরাজিত'। এখানে অপুর কৈশোর ও যৌবনের কাহিনী বর্ণিত। এখানে অপুর কলকাতাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে জীবনযাপন ও ভ্রমণ, অপর্ণার সঙ্গে বিবাহ ও স্ত্রীর মৃত্যু শেষে পুত্র কাজলকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসার বিচিত্র ঘটনাধারা বিবৃতি।
পালামৌ
ভ্রমণপ্রিয় মানুষ যারা পাহাড় আর সাগরের প্রেমে মজেছেন তারা সকলেই বলে থাকেন যে পাহাড় বা সাগর তাদের নীরবে আহ্বান করে । বিশেষ করে এই দুই জায়গার স্থির একঘেয়ে রূপ সত্ত্বেও এক অজানা মায়ার টান অনুভব করেন নাবিকেরা, অনেক পর্বতারোহীরা। এই মায়ার খেলা যুগ-যুগান্তর ধরে চলে এসেছে। “পালামৌ” গল্পে লেখক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এমনই মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়ার অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন। যদিও এই ভ্রমণ কাহিনী যতটা না ভ্রমণ কাহিনী, তার চেয়ে মানবিক উপাখ্যানের গল্প হিসেবেই ধরা দেবে পাঠকের হৃদয়ে।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
কোন জাতির গৌরব ও মহত্ত্ব নিরূপণ করিতে হইলে, কি কি উপাদানে এই মহত্ত্ব গঠিত সর্বাগ্রে তাহারই পৰ্য্যালোচনা করিতে হইবে। আমার বোধ হয়, ভূদেব ও বঙ্কিমচন্দ্রের লিখিত অভিমতের উপর নির্ভর করিয়া যাহারা বাঙ্গালীর, এমন কি, হিন্দু জাতির গৌরবের শ্লাঘা করিয়া থাকেন, তাহারা অজ্ঞাতসারে ভ্রান্ত অভিমত পাের্ষণ করেন মাত্র। রঘুনন্দন ও কুল্লুকভট্টের টীকা টিপ্পনী শ্লাঘার বিষয় জ্ঞান করিয়া যদি উহারই আদেশ অভ্রান্ত সত্য মানিয়া, সেই অতীতপ্রায় কূট শিক্ষায় মনােনিবেশ আমাদের গৌরবের বিষয় বলিয়া অনুমিত হয়, আর বর্তমানের নূতন আশা, নুতন উদ্দীপনা ঠেলিয়া ফেলিয়া প্রাচীনের প্রচলন শান্তির ধীর কৰ্ম্ম বলিয়া আদৃত হয়, জানি না এ মৃতপ্রায় জাতি নূতনের প্রবল অসহনীয় সংঘর্ষে আর কত দিন বাঁচিতে সক্ষম হইবে !
বিষাদ-সিন্ধু
'বিষাদ-সিন্ধু' উপাখ্যানটি নানাভাবে পাঠ করা যায়। এতে ইতিহাস আছে মনে করে বা, এতে ধর্মীয় পুরাণ মিশ্রিত, সেই আগ্রহে। বিষাদ-সিন্ধুর মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে- মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঘটনাসমূহ। বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলির সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায়, কিন্তু কোনো কোনো অপ্রধান চরিত্রের উল্লেখ বা সন্ধান ঐতিহাসিক কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না। এটি কাব্যিক শৈলীতে রচিত এবং এতে অনেক নাটকীয় পর্ব রয়েছে। বইটি শুধু কারবালা-র যুদ্ধের ঘটনা কেন ঘটে তা বুঝে নিতেই সাহায্য করে না, ইমাম হোসেনের মৃত্যুর ফলে যে সকল ঘটনা ঘটেছিল তারও বর্ণনা রয়েছে এ গ্রন্থে। এই ঐতিহাসিক উপন্যাসে বিষাদ-সিন্ধুর বিষাদ কোন ধরনের বিষাদ তা যেমন বোঝা যায় তেমনই উপন্যাসের চরিত্রচিত্রণ, মানবজীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, হিংসা-বিদ্বেষ,ইতিহাসের পটভূমিকায় সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম, রক্তপাত, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদিও চিত্রিত হয়েছে।
মদ খাওয়া বড় দায়
ঊনিশ শতকের কলকাতা। বঙ্গ দেশের বাবুদিগের নিমিত্ত সে বড় সুখের সময়। দেশে আছে জমিদারি, আর রাজধানীতে বাসা। ঘরে সতী সাধ্বীর স্ত্রীদের সতীত্ব রক্ষা নিয়ে প্রবল আচার, বিধি নিষেধ আর বাইরে বারবধূ সংসর্গেই সামাজিক প্রতিষ্ঠা।সে বড়োই রঙ্গ। একদিকে মদ্যপান নিবারণে প্রবল হৈ চৈ আর অন্যদিকে দ্বার বন্ধ করে প্রবল মদ্যচর্চা।
চারিদিকে মদ খাওয়ার ওই রমরমা দেখে এগিয়ে এলেন কিছু সমাজমনষ্ক কিছু মানুষ। পত্র-পত্রিকাতেও লেখালিখি শুরু হলো। মদ্যপান বিরোধী ওই আন্দোলনে এগিয়ে এলেন এক ডিরোজিয়ান প্যারীচাঁদ মিত্র এবং ডেভিড হেয়ারের এবং হিন্দু কলেজের উত্তর-ডিরোজিও পর্বের ছাত্র প্যারীচরণ সরকার। প্যারীচাঁদ মিত্র মদ খাওয়ার বিরোধিতা করে ‘মাসিক পত্রিকায়’ কয়েকটি প্রবন্ধ লিখলেন এবং তারপর আজ থেকে একশ বাষট্টি বছর পূর্বে টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে ‘মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায়’ নামে মদ্যপানের কুফল সম্পর্কে ব্যাঙ্গাত্মক এই উপন্যাসটি লিখে ফেলেন।
হুতোম প্যাঁচার নকশা
হুতোম প্যাঁচার নকশা কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শুরুর সময়ে রচিত একটি গদ্য উপাখ্যান, যা তিনি “হুতোম প্যাঁচা” ছদ্মনামে লিখেছেন। এটি মূলত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক সামাজিক নকশা জাতীয় রচনা। এতে কলকাতার সামাজিক ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে এবং কলকাতার কথ্য ভাষাকে প্রথম সাহিত্যে স্থান দেওয়া হয়েছে। ১৮৬১ সালে “চড়ক” শিরোনামে একটি নকশায় এটি প্রকাশিত হয়, পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে প্রথম ভাগ এবং ১৮৬৪ সালে দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয়।
ত্রৈলোক্যনাথ রচনা সংগ্রহ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ব্যঙ্গকৌতুক রসের স্রষ্টা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে এক নতুন রকমের উদ্ভট হাস্যরসের প্রবর্তক ছিলেন।
এতে আছেঃ- ফোকলা দিগম্বর, ডমরু চরিত, বাঙ্গাল-নিধিরাম, বীরবালা, লুল্লু, কঙ্কাবতী
অপ্রাকৃত সমগ্র
রয়েছে একচল্লিশটি গল্প : নব-বৃন্দাবন, মেঘমল্লার,তিরোলের বালা, ছেলেধরা, বোমাইবুরুর জঙ্গলে, সোনাকরা যাদুকর, খোলা দরজার ইতিহাস,পথিকের বন্ধু, অভিশাপ, অভিশপ্ত, হাসি, প্রত্নতত্ত্ব,রহস্য, আরক, ছায়াছবি, রঙ্কিনীদেবীর খড়গ, মেডেল, পেয়ালা, ভৌতিক পালঙ্ক, গঙ্গাধরের বিপদ, মশলা-ভূত, কাশী কবিরাজের গল্প, বিরজা হোম ও তার বাধা, মায়া, টান, বউ চণ্ডীর মাঠ, খুঁটি দেবতা, পৈতৃক ভিটা, অশরীরী, বরো বাগদিনী, বাঘের মন্তর, নুটি মন্তর, কবিরাজের বিপদ, মাতু পাগলি - তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প, মধুসুন্দরীদেবী - তারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্প, নাস্তিক, দাতার-স্বর্গ, স্বপ্ন-বাসুদেব, শেষ লেখা, পিদিমের নিচে, উডুম্বর এবং একটি উপন্যাস : দেবযান !