রূপকথা
মেঘকেতন

“মেঘকেতন” পরিণতমনা পাঠক-পাঠিকাদের জন্য রচিত “রূপন্যাস”( রূপকথা - উপন্যাস )। এই রূপন্যাসের বৈশিষ্ট্য এই যে , এর মধ্যে রাজা - রাণী, রাজপুত্র - রাজকন্যা , দানব ইত্যাদি থাকলেও প্রচলিত রূপকথায় সব কিছু আমরা যেভাবে ঘটতে দেখি , এখানে সেভাবে ঘটে না। অন্য রূপকথা শুধুই দেখায় আর শোনায়। ”মেঘকেতন”তার সঙ্গে ভাবাবেও , এই আমাদের ধারণা। পাঠক - পাঠিকা সজাগ এবং মনস্ক থাকলে স্তরের পর স্তর অভিনবত্বের উন্মেষ ঘটবে তাঁদের দৃষ্টি এবং বোধের সম্মুখে।
এ কাহিনীতে রাজা এবং রাজপুত্রেরাই শুধু যুদ্ধ এবং অন্যান্য বিদ্যায় পারদর্শী নন। রাণী এবং রাজকন্যারাও তাঁদের যোগ্য সহযোগিনী। অন্য রূপকথায় রাজা - রাজপুত্রদের বীরত্বের কথা থাকে। এখানেও আছে। কিন্তু সেইসঙ্গে আছে তাঁদের ধীশক্তির পরীক্ষা , রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচনে দক্ষতার পরিচয়। আছে এমন আরও অনেক প্রাপ্তির সম্ভাবনা , যা পাঠক - পাঠিকা নিজেরাই আবিষ্কার করুন এমনটিই লেখকের সাগ্রহ আকাঙ্ক্ষা ।
বিশ্ব সৃষ্টির মিথ কথন -প্রথম খন্ড

মিথ কথনের জগতের সীমা নির্ধারণ করা হয়তো অসম্ভব কিন্তু মানুষ কখনোই সে চেষ্টা বন্ধ করেনি । যে গল্পগুলো এখানে সংকলিত হয়েছে সেগুলি সেই প্রচেষ্টার ফল । বিশ্বের অসংখ্য মিথ হতে ৫০টা আছে এই ই-বইয়েতে। পঞ্চাশ একটা সংখ্যা মাত্র। পড়তে পড়তে আপনারা বুঝতে পারবেন গল্পের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কীভাবে? উত্তরটা আপনারাই খুঁজে পাবেন।
সঙসপ্তক কাহিনী

আলেক্সিস কিভি (১০ অক্টোবর ১৮৩৪-৩১ ডিসেম্বর ১৮৭২) বেঁচে থাকতে তাঁর শ্রেষ্ঠ বই সঙসপ্তক কাহিনি-র সাফল্য দেখে যাননি। কিভি যে আধুনিক ফিনল্যান্ডের বরেণ্য লেখক এবং জাতীয় চেতনার পথিকৃৎ, একথা বুঝতে অনেক দেরি হয়েছে, এমনকি তাঁর স্বদেশেও। হেলসিঙ্কির রাউতাতিয়েন্তোরি চত্বরে, ফিনিশ জাতীয় নাট্যশালার সামনে, তাঁর মূর্তি বসানো হয় ১৯৩৯ সালে (ভাস্কর: ভ্যাইন্যো আলতোনেন)। বাংলার আগে মোট চৌত্রিশটা ভাষায় কিভির এই উপন্যাসের অনুবাদ বেরিয়েছে, তার মধ্যে এশীয় ভাষা আরবি, চিনে, জাপানি, তুর্কি, ফারসি, হিব্রু।
ফিনল্যান্ডের যে সাত ভাই এই অনূদিত উপন্যাসের নায়ক, তাদের সঙ্গে মহাভারতের ওই দৃঢ়সংকল্প সাহসী যোদ্ধাদের কিছু মিল সত্যিই পাওয়া যায়। কিন্তু ঙ আর দন্ত্য স দিয়ে “সঙ-সপ্তক” বানান কেন? বানানটার কাজ হল মনে করিয়ে দেওয়া যে ওই সাতজন তরুণকে ঠাট্টা করবার জন্যে শত্রুরা যে গান বেঁধেছিল তাতে ওদের বলা হয়েছিল সাতটা সঙ। লোকজনের নির্মম হেনস্তা গায়ে মেখে ওরা জীবনযুদ্ধে এমন রণনীতি বেছে নিয়েছিল যাতে বিদ্রুপের জবাব দিতে পারে। শত্রুদের চোখে চোখ রেখেই ওদের সেই অভাবনীয় জয়যাত্রা, যেটার গুণে এই উপন্যাস বিশিষ্ট সার্থকতা অর্জন করেছে।
এ গল্পের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের কী সম্পর্ক? সঙসপ্তক কাহিনির মূল বিষয় হল, ব্রাত্যরা কীভাবে নিজেদের আত্মসম্মান অটুট রেখেও শিক্ষালাভ করে সমাজের মূলস্রোতে স্বীকৃতি পেতে পারে। দারিদ্র্য ও বঞ্চনার ফলে যেসব মানুষ বহু শতাব্দী ধরে শিক্ষার সুযোগ পায়নি, আজ তারা অভূতপূর্ব অনুপাতে ইস্কুল কলেজে যাচ্ছে। নয়া সাক্ষরের অদম্য উৎসাহে ভরা কৌতূহলী চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনে নিচ্ছে কোন পথে চললে পরবর্তী প্রজন্ম এই দুর্দশার শৃঙ্খল কেটে বেরোতে পারবে। আমাদের সারা সমাজ জুড়ে এই যে বিরাট মন্থন চলছে, শিক্ষাপ্রাপ্তি আর মর্যাদালাভের দিকে এগিয়ে চলার এই নাটকীয় সময়টাকে পরিষ্কার বুঝতে পারবার জন্যে স্পষ্টতই বাঙালি পাঠকমাত্রেরই সঙসপ্তক কাহিনি পড়া উচিত।
ঠাকুরমার ঝুলি

ঠাকুরমার ঝুলিটির মত এত বড় স্বদেশী জিনিস আমাদের দেশে আর কি আছে? কিন্তু হায় এই মোহন ঝুলিটিও ইদানীং ম্যাঞ্চেস্টারের কল হইতে তৈরী হইয়া আসিতেছিল। এখনকার কালে বিলাতের “Fairy Tales” আমাদের ছেলেদের একমাত্র গতি হইয়া উঠিবার উপক্রম করিয়াছে। স্বদেশের দিদিমা কোম্পানী একেবারে দেউলে’। তাঁদের ঝুলি ঝাড়া দিলে কোন কোন স্থলে মার্টিনের এথিকস এবং বার্কের ফরাসী বিপ্লবের নোটবই বাহির হইয়া পড়িতে পারে, কিন্তু কোথায় গেল-রাজপুত্র পাত্তরের পুত্র, কোথায় বেঙ্গমা-বেঙ্গমী, কোথায়-সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের সাত রাজার ধন মাণিক! “জ্যোচ্ছনা ফুল ফুটেছে”; মা’র মুখের এক একটি কথায় সেই আকাশনিখিল ভরা জ্যোৎস্নার রাজ্যে, জ্যোৎস্নার সেই নির্মল শুভ্র পটখানির উপর পলে পলে কত বিশাল “রাজ-রাজত্ব”, কত “অছিন্ অভিন্” রাজপুরী, কত চিরসুন্দর রাজপুত্র রাজকন্যার অবর্ণনীয় ছবি আমার শৈশব চুর সামনে সত্য কারটির মত হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছিল। আসুন আরেকবার ফিরে দেখি সেই স্বপ্নময় জগৎ।