ফ্যান্টাসি
ব্যাবিলনের পাখি

কোলকাতাতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শীতের সন্ধ্যা একটু তাড়াতাড়িই নামে। পৌনে পাঁচটাতেই অন্ধকার। ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলেছে ছেলেটি। বাড়ি ফেরার ট্রেন এখনও অনেক দেরি। রাত্রি সাড়ে দশটায় হাওড়া স্টেশন থেকে কবিগুরু এক্সপ্রেস। হাতে অনেকটা সময়। উদ্দেশ্য বইপাড়া থেকে কিছু বই কেনা।
বই কিনে সে ফিরে চলল তার বাড়ির দিকে। গন্তব্য স্টেশনে লোকজন বিশেষ নেই। নেমেছে আট দশ জন হবে। গ্রাম্য স্টেশন!
তার চোখে পড়লো তরুণীকে, ফেরার পথ ধরতেই ডাক ভেসে এলো তার দিক থেকে। থমকে দাঁড়ালো ছেলেটি।
চলুন যাই ইতিহাসের কুয়াশা কাটিয়ে সসময়ের ভাটার টানে! থিওমোনা ব্যাবিলনের রাজকন্যা। মহারাজ নেবোনিডাস ও পারস্য সাম্রাজ্যের মহারাজ সাইরাসের বাহিনীর যুদ্ধ চলছে ! সাইরাসের সেনাপতি জোপরাসের হাতে পরাজিত হলেন নেবোনিডাস। যুদ্ধবন্দিনী থিওমোনার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার।
সময়ের উজানে আর ভাটার এই দুই বিন্দু কি কোনোভাবে মিলে গেল? তা নিয়েই এই উপন্যাসটি।
চাঁদ ওঝার সপ্ত আশ্চর্য

চাঁদ ওঝা কে? বা, প্রশ্ন করা যেতে পারেঃ চাঁদ ওঝা কেন? দুটো প্রশ্নের উত্তর একই। এক ভ্রাতৃপ্রতিম সাহিত্যিকের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ একদিন চাঁদ ওঝার আইডিয়ার জন্ম। সেই আলোচনাতেই ঠিক করা হয়, যেধরণের তন্ত্রসাধনাসংক্রান্ত হরর গল্প একশ্রেণির পাঠক প্রচুর পড়ছেন এবং কিছু লেখক প্রচুর লিখছেন, সেই লেখাকে ব্যঙ্গ করেই এক প্রতিনায়ককে খাড়া করা হবে, যার প্রবল প্রতাপে বাকি তান্ত্রিকরা থরহরিকম্প হয়ে যাবে। “শ্মশান-মশান কাঁপানো তান্ত্রিক” (ভাইটির কথা ধার করে বলি) এই চাঁদ ওঝা পারে না হেন কাজ নেই। তার গতিবিধি শুধু এই পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা ছড়িয়ে আছে গোটা মহাবিশ্বে এবং অন্যান্য প্যারালাল ইউনিভার্সেও।
পাঠক, ‘চাঁদ ওঝার সপ্ত আশ্চর্য’-এ আপনাকে স্বাগত।
দাবনিশ আখ্যান

লেখকের তরফ থেকে কল্পনার ঘোড়া ছোটানো বা পাঠকের পক্ষ থেকে অভিনব কল্পনার রস আস্বাদন করা, দুটোই হয় ফ্যান্টাসিতে। আর সেটাও যদি হয় এপিক বা হাই ফ্যান্টাসি, তাহলে চাওয়া-পাওয়ার হিসেবটা আরো বেড়ে যায়। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কল্পনা শক্তির প্রয়োগ ঘটে এ জনরাটিতেই। একদম গোড়া থেকে একটা দুনিয়া গড়ে তোলা, সে দুনিয়ার ভূখণ্ড, নিয়ম কানুন বা ইতিহাস, মানুষ বা অন্যান্য জীবের প্রজাতি, সে দুনিয়ার বিজ্ঞান যেটা অনেক ক্ষেত্রেই আবার জাদুর মতো অভিনব ব্যাপার সমর্থন করে বিভিন্ন উদ্ভিদ, মানব সংস্কৃতি; কাজ করার সুযোগ থাকে অনেক কিছুতেই। পাঠকও এ জনরায় খুঁজে পায় বুঁদ হয়ে থাকার মতো হাজারও উপাদান।
এইসব মাথায় রেখেই দাবনিশ লেখা শুরু। দাবনিশ আখ্যান হবে একটা সিরিজ। আসমানের আঁধার এর শুরু ।
দেজা ভ্যু

ঘন বড় বড় গাছগুলো আকাশটাকে ঢেকে রেখেছে। এই ভর দুপুর বেলাতেও প্রায় অন্ধকার লাগছে বনের ভেতর থেকে। অন্ধকার লাগাই তো স্বাভাবিক এ যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বন। হ্যাঁ আমাজনেরই গহীনে অবস্থান করছে ছয়জনের দলটা। ......
আপনি রাস্তা দিয়ে আপনমনে হাঁটছেন, হঠাৎ করে কোনো বাড়ি, মানুষ বা অন্য কিছু দেখে আপনার মনে হলো আপনি এটি আগে দেখেছেন। খুব চেনা চেনা লাগছে মানুষ বা জিনিসটি। অথচ, আপনি সত্যিই তা আগে কখনো দেখেন নি। বিজ্ঞানের ভাষায়, আমাদের হঠাৎ এই প্রতিক্রিয়ার নাম হলো ‘দেজা ভ্যু।
কিন্তু এই জিনিস যদি আপনার সঙ্গে ঘটে আমাজনে বা আরো ভয়ানক কোনো জায়গায়?
যুদ্ধের সহস্র বছর পর

‘গল্পটা এক অন্ধকার দ্বীপের, সমুদ্র পেরিয়ে অন্ধকার অংশে যে দ্বীপের অবস্থান। যে দ্বীপে আছে অসম্ভব শক্তিশালী এক পাথর। আর পাথরের পাহারায় আছে রূপকথার ভয়ংকর প্রাণী । তিন তিনবার যেখানে গিয়ে বিফল হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা। ফিরে এসেছে মাত্র একজন, মৃত্যুঞ্জয়; যে মানুষটা মরতে জানে না, যার সূত্রপাত সহস্র বছর আগের সেই যুদ্ধে; যে যুদ্ধে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল শয়তানের অনুসারী দিদিয়ানদের। আবারও যোদ্ধাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহরার রাজা। এবারের অভিযান কি সফল হবে?
মাঝ সমুদ্রে হঠাৎ দ্বীপের অভিযানে শত্রু হিসেবে আবির্ভাব হয় সমুদ্রের ত্রাস জলদস্যু ডাওমিস। কেটে যায় সহস্র বছর, প্রধান চত্বরে থেমে যায় গাড়ি। হ্যান আর সায়ার গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে তাকায়। সামনে তামা রঙের বিশাল দুটি মূর্তি, পরনে যোদ্ধার পোশাক। সামনের মূর্তিটা মহাবীর সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাসের আর ঠিক তার কাঁধের সাথে কাঁধ মিশিয়ে বাম দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একটা মূর্তি ! আশিহা- প্রাচীন সেই মহাবীরের এই মূর্তিি শ্রদ্ধা এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মহান আশিহা; সহস্র বছর আগে যার কারণেই রক্ষা পেয়েছিল সমগ্র মানবজাতি।
ঠাকুরমার ঝুলি

ঠাকুরমার ঝুলিটির মত এত বড় স্বদেশী জিনিস আমাদের দেশে আর কি আছে? কিন্তু হায় এই মোহন ঝুলিটিও ইদানীং ম্যাঞ্চেস্টারের কল হইতে তৈরী হইয়া আসিতেছিল। এখনকার কালে বিলাতের “Fairy Tales” আমাদের ছেলেদের একমাত্র গতি হইয়া উঠিবার উপক্রম করিয়াছে। স্বদেশের দিদিমা কোম্পানী একেবারে দেউলে’। তাঁদের ঝুলি ঝাড়া দিলে কোন কোন স্থলে মার্টিনের এথিকস এবং বার্কের ফরাসী বিপ্লবের নোটবই বাহির হইয়া পড়িতে পারে, কিন্তু কোথায় গেল-রাজপুত্র পাত্তরের পুত্র, কোথায় বেঙ্গমা-বেঙ্গমী, কোথায়-সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের সাত রাজার ধন মাণিক! “জ্যোচ্ছনা ফুল ফুটেছে”; মা’র মুখের এক একটি কথায় সেই আকাশনিখিল ভরা জ্যোৎস্নার রাজ্যে, জ্যোৎস্নার সেই নির্মল শুভ্র পটখানির উপর পলে পলে কত বিশাল “রাজ-রাজত্ব”, কত “অছিন্ অভিন্” রাজপুরী, কত চিরসুন্দর রাজপুত্র রাজকন্যার অবর্ণনীয় ছবি আমার শৈশব চুর সামনে সত্য কারটির মত হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছিল। আসুন আরেকবার ফিরে দেখি সেই স্বপ্নময় জগৎ।